Posts

Showing posts from May, 2019

চৌকাঠ

Image
উত্তর-কলকাতা' কথাটা, মফস্বলি বাসস্ট্যান্ডের গুমটি পানের দোকানের মত। কেউ কোত্থাও নেই, রেডিওতে হিন্দি গান আর পাল্লা দিয়ে আশুদ্ পাতায় মনকেমন করা ঝিরিঝিরি শব্দ। সবার অলক্ষ্যেই, বাসস্ট্যান্ডের হাওয়ায় অর্বাচীনের মতো জট পাকিয়ে যায় দোক্তা, জর্দা আর পানমশলার গন্ধগুলো। দোকানের সামনে দাঁড়ালেই, ঢুলুঢুলু দোকানি একগাল হেসে মন ভালো করে দেয়! চেনা খদ্দেরের চেনা চাহিদা; চাইতেই হয় না। উত্তর-কলকাতাও ঠিক তেমনি। চাইতে হয় না। ঠিক যখন যেমন দরকার, রোদ্দুর তিরপল দেশলাই মাদুর ক্যালেন্ডার খুচরো.. চাহিদার ঝোপে হাতের কাছে আরশিনগর! এই মহাবিশ্বের জীবনকালের তুলনায় মনুষ্যজীবন নিতান্তই লিলিপুট। তাও মায়া, মনকেমন আর মান অভিমানের খেলা। স্কটিশ ইস্কুলে পড়তে একজন স্যার বলেছিলেন, আমরা কেউই বড় হয়ে যাইনি; বড় হচ্ছি। কচি ডাঁটো ডাগর বুড়ো সবাই; সব্বাই বড় হচ্ছি। উত্তর-কলকাতাও বড় হচ্ছে, বড় হবে। রোজ; কখনও আমাদের নিয়ে, কখনও ছাড়াই।

চিন্তার বিষয়

Image
আমি কোত্থেকে এলুম- অল্প বয়সে এই চিন্তাটা ভাবিয়ে তুলেছিল খুব। অতএব এই টিকি জ্বালানো গল্পটা মা'কে প্রায়ই শোনাতে হত। সৌভাগ্যবশত 'ঠাকুর দিয়ে গেছে' বা 'মেলা থেকে এনেছি' ধরণের আলফাল গল্প আমায় শোনানো হয়নি। তবে রহস্যময় জায়গাগুলো চেপে, গল্পে অপ্রাসঙ্গিক জায়গা জুড়ে জুড়ে গল্প লম্বা হত আর ইলেকট্রিসিটি বর্জিত গেঁও রাত্তিরে মশারির ভেতরে আরও রহস্যের সৃষ্টি হত! ভরপেট দুধরুটি খেয়ে, গলায় পাউডার মেখে হাতপাখার হাওয়ায় অচিরেই সেরাত্রের মত খেলা সাঙ্গ করে ঘুমিয়ে পড়লে তবে জমির মেঠো আল ধরে বইয়ের পাতায় আঁকা সিংহ, সজারু, চিতা আর বেবুনের দল হাঁটতে বেরুত। আম গাছের ডালে আড়চোখে চাঁদ দেখতো অলস শ্লথ। সেই বয়স থেকে আজ অবধি একমাত্র নিজের কল্পনাশক্তির ওপরই আমি দৃঢ় আস্থা রাখতে পারি। কোত্থেকে এলুম- গল্পটা ঘনঘন শোনার পর থেকেই মনে হতে থাকে, ছোটো থেকে যখন বড় হয় সবাই, তবে তখন আমার মত বিরাট সাইজের (পনেরো কেজি) চেয়েও ছোটো বাচ্চা হয়। তার চেয়েও ছোটো বাচ্চা হয়। আবার তার চেয়েও ছোট ছোট করতে করতে সেটা কত ছোটো আর চিন্তা করে কূল কিনারা পাওয়া যেত না। বিশ্বায়নের এই যুগে হোমো সেপিয়েন্স নামক স্তন্যপায়ী ঠিক যখন থেকে

শিশু ও বিজ্ঞান

Image
ভালো-ছেলে হতে হবে, এমন একটা চাপের সম্মুখীন হয়েছে প্রায় সবাই। কিন্তু এই ভালো-ছেলে ব্যাপারটা  ঠিক কিরকম? কোনো শিশুর জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই মূলত মা-বাবা বা বাড়ির বা তার সমাজের আশেপাশে যারা থাকেন, তাদের চোখে সেই শিশুটি ভালো না খারাপ সেটা যাচাই করার একটা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ চেষ্টা থেকেই যায়। যেসব ছেলেমেয়েদের নিয়ন্ত্রণ করা শক্ত, বা যারা কৌতূহল না মেটা অবধি প্রশ্নের পর প্রশ্ন করেই চলে, তাদের নিরীক্ষণের পর সমাজর তথাকথিত জ্যাঠামশাইরা তকমা দেন, ছেলেটা বা মেয়েটা এঁচড়ে পাকা! কিন্তু কোনো শিশুর যদি কৌতূহল কম থাকে, তার প্রশ্নের মান যদি সহজ থাকে বা প্রশ্নের পরিমাণ কম থাকে বা একেবারেই না থাকে, তবে সেই শিশুটি অত্যন্ত সুবোধ এবং তার ভবিষ্যত উজ্জ্বল বলে ধরে নেওয়া হয়! শৈশবে প্রথম যেকোনো কিছু দর্শনই অবাক করে মোহিত করে দেয়। সেই অবাক হওয়াই জলসিঞ্চন করে কৌতূহলী মননে এবং সেই কৌতূহল থেকেই আসে বিজ্ঞান চেতনা। কেবল বই পড়ে পরীক্ষা পাস নয়; প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞানের ব্যবহার করাই বিজ্ঞান শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য। জীবনের মোড় ঘুরতে ঘুরতে আমরা পৌঁছে যাই অন্য কোনখানে কিন্তু তার শুভারম্ভ হয়ে যায় শৈশবেই। স্বামী বিবেকানন্দে

দুঃখ বিহীন দুঃখ

Image
এবারের গরমে আধমরা হয়ে গেছে সবাই। গরমের চোটে কোনো কিছুই ভালো লাগছে না। আমার মাথাটা বাকিদের মাথার চেয়ে বড়। তাই নিয়ে ইস্কুলে পড়ার সময় থেকেই সহপাঠীরা হাসিঠাট্টা করে অতিষ্ঠ করে তুলতো। এখন সেই বিরাট মাথায় ততোধিক বড়বড় চুল হয়ে আরও গরম লাগছে। এই গরমের ওপর শনিবার, তাও আবার কলকাতায় ভোটের আগের দিন- সব মিলিয়ে রাস্তাঘাট ফাঁকা। কখনো কখনো দল বেঁধে ক্যামোফ্লাজ পোষাকের মিলিটারি শহর বেড়াতে বেরিয়েছে। সবাই বেশ লম্বা, কয়েকজনকে দেখে কাশ্মীরি বলে মনে হয়। ঘরের গরম কাটিয়ে আমি চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছি। কারমাইকেল হস্টেল থেকে কালো টি শার্ট পরে জনা চারেক ছেলেও চা খেতে এসেছে। ওদের চা খাওয়ার ধরণ দেখে মনে হয় ওদের খুব তাড়া; সম্ভবত পরীক্ষা। ওরা সবাই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ছাত্র। চায়ের দোকানের গায়েই একখানা বটগাছ। তার তলাতেই বসার ছোটো বেঞ্চি। সন্ধ্যে আর নেই, বা রাত হবে বলে তাড়াহুড়ো করে ডিউটি শেষ করে ফেলার তাল করছে। যারা চা খাচ্ছে, সবারই বাড়ি ফেরার তাড়া। কেউ বসছে না। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই খাচ্ছে। অসাবধানী চুমুকে ছ্যাঁকা লাগছে, ঠোঁটে ঠোঁট বুলিয়ে আবার হুড়োহুড়ি করে চুমুক দিচ্ছে সবাই। তারপরই সবাই ভীড় ট্রেনে মিলি

খোসায় বিপদ

Image
মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিক স্তর যাঁরা বাংলা বোর্ডের আওতায় ছিলেন, তাঁরা সম্ভবত মনে করতে পারবেন ফিজিক্স কেমিস্ট্রি অঙ্ক যে বই হোক না কেন, বাংলা ইংরাজিতে উচ্চমাধ্যমিক অবধি, হলদেটে কমলা রঙের সরকারি বই-ই কিনতে হত (এখনকার কথা আমার অজানা)। এই স্তরে আমার অদ্ভুত একটা রোগ ছিল; বই কিনেই ঠিক যে যে গল্প, গদ্য আর নাটকগুলো সিলেবাসে নেই, সেইগুলো সবার আগে নাওয়া খাওয়া ভুলে পড়ে ফেলা। এবং আমার দৃঢ় বিশ্বাস, তৎকালীন ফেসবুক-হোয়াটসঅ্যাপ বিহীন জীবনে এই রোগে আক্রান্ত হয়নি এরকম ছাত্রছাত্রী খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। সরকারি বইয়ে সিলেবাসের বাইরের গল্প পড়ার যা স্বাদ ছিল, তা এমনি আলাদা করে গল্প বই পড়ায় ছিল না। এখনও স্পষ্ট মনে আছে, মাধ্যমিক পাস করার পরই, গল্প পড়ার লোভে আর বই ফুরিয়ে যাওয়ার দোহাই দিয়ে আগেভাগেই উচ্চমাধ্যমিকের পাঠসঞ্চয়ন আর হায়ার সেকেন্ডারি ইংলিশ সিলেকশান মিলিয়ে মোট পাঁচটা বই কিনে ফেলি। কবিতা ও নাটকের বইতে উৎপল দত্তের নাটক নীলকন্ঠ পড়েছিলাম প্রায় আট বছর আগে। আজ সত্যেন বসুর অনূদিত একটা গল্প পড়তে পড়তে সেই নীলকন্ঠ নাটকের কথাটা মনে পড়ে গেল! এই অনূূদিত গল্প আর নাটকের থিম অবশ্যই আলাদা। তবুও প্রতি পদে পদে যেন একই বক্তব

লখনউ থেকে মেটেবুরুজ হয়ে চাঁদনি চক

Image
ছোটবেলা থেকে সবাই শুনে আসছি, মিথ্যে কথা বলতে নেই। তবুও বিপাকে পড়ে সবাইকেই মিথ্যের আশ্রয় নিতে হয়। কিন্তু দিনে দুপুরে গুচ্ছের মিথ্যে কথা বলতে পারে যারা, তারা সব নানারকম লাল নীল হলুদ সবুজ রাজনৈতিক দলের নেতা। এবছর কলকাতায় গরম পড়েছে বেজায়! গরমের চোটে, একটু বেলা বাড়তে না বাড়তেই রাস্তার কুকুরগুলো লুকিয়ে পড়ছে ছায়া খুঁজে। ধুনুরিরা বেরোচ্ছে না  তুলো ধুনতে। বিহারী রিকশা ওয়ালা দুপুর হতেই ডেলা করে মাখা ছাতু খেয়ে গা এলিয়ে দিচ্ছে ছায়াতে। আর লোকসভা ভোটের দৌলতে সেসব হলদে সবুজ ওরাং ওটাঙের দল এই গরমে মাইক বাজিয়ে চেঁচামেচি শুরু করেছে। এইরকম গরমের দুপুরবেলা ঘরে বসে নেতাদের চেঁচামেচির চোটে বসে মন দিয়ে কাজ করার জো নেই। অগত্যা বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পড়াই সমীচীন বলে মনে হল। রাস্তা সম্পূর্ণ শুনশান। সূর্যের তেজ আমার কালো ছাতা ভেদ করে ঝলসে দিচ্ছে চামড়া। বউবাজার পার হয়ে একটা গলির ছায়া ধরে হাঁটতে হাঁটতে ওয়েলিংটন স্কোয়ারে পৌঁছে গেলাম। রাস্তায় গঙ্গাজলের কল থেকে আগ্নেয়গিরির মত হুড়োহুড়ি করে জল বেরিয়ে আসছে। সেদিকে একদৃষ্টে চেয়ে থাকলে ঘোর লেগে যায়। একটা কাক সেই জলে কখনও ঠোঁট দিয়ে জল তুলে, কখনো মাথা ডুবিয়ে নানান কায়দায় চান ক

বড় যদি হতে চাও..

Image
সিবলিং রাইভ্যালরি বা সহোদর ভাইবোনের অন্তর্দ্বন্দ্ব সত্যিই কি কেবল বাল্যবয়সে সীমাবদ্ধ? বড় বয়সের রেষারেষিটা নামকরণের জন্যে কেউ নেই বলেই হয়তো সেটা সাংসারিক দ্বন্দ্ব বলে চালিয়ে দেওয়া হয়ে আসছে। ঋতুপর্ণ ঘোষের অভাবের প্রায় ছ'বছর পর তারই গল্পের ভিত্তিতে ছবি তৈরী হওয়াটা বাংলা সিনেমাপ্রেমীদের জন্যে বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটা ঘটনা। তাছাড়া সেই ছবি যদি কৌশিক গাঙ্গুলীর তৈরী হয় তো তার আলাদা আকর্ষণ থাকেই। মেনস্ট্রিম নায়ক-নায়িকার ছবি বাদে বাকি সমস্ত ছবি দেখতে বসলেই নিজের অজান্তেই মন যেকোনো একটা চরিত্রের পক্ষ নিয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু এই ছবিতে দর্শকের ব্যক্তিগত খিদে আর অনুভূতি অনুযায়ী যে যার মতো পক্ষ নিয়ে দাঁড়ালেই গোলমাল। পুরুষতান্ত্রিক ভারতীয় সমাজে, সামাজিক পারিবারিক কিম্বা রাজনৈতিক যেকোনো ক্ষেত্রেই বড় ছেলের ভূমিকা সবসময় অগ্রগণ্য। তবে প্রশ্নটা যখন ওঠে অধিকারবোধ নিয়ে, তখন সামাজিকতাকে প্রাধান্য পেতে একটু বেগ পেতে হয়। নিউক্লিয়ার পরিবারে বা ফ্ল্যাট কালচারে বেড়ে ওঠা দর্শকের, এই ছবিকে অবাস্তব আর বেমানান বলে মনে হতে পারে। তবে যেসব দর্শক একান্নবর্তি পরিবারে বেড়ে উঠেছেন, তারা হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করতে পারবেন এই ছবি

সোনার সন্ধানে

Image
যখন সময় কাটানোটাই একমাত্র কাজ হয়ে দাঁড়ায়, তখন সময় কাটার বদলে, যেন জুড়তে থাকে ক্রমশ! বেশ খানিকটা পায়চারি হল, অথচ কারোর দেখা নেই! সারারাত জেগে। ভোর হতে বেশী দেরী নেই বোধহয়। গ্র্যান্ডে ঢোকার সৌভাগ্য আমার হবে বলে ভাবিনি, তাও আবার এই পড়ন্ত শীতের মাঝরাত কিম্বা কাকভোরে গ্র্যান্ডের ছাদে দাঁড়িয়ে রয়েছি। কুয়াশা আর হিমের চোটে শরীর খারাপ হওয়ার ভয়ও হচ্ছে। এক জীবনে যে কত কী অভিজ্ঞতা হয়, ভাবতেও অবাক লাগে! ঠিক ঢিল ছোঁড়া দূরেই, বিয়াল্লিশের বাড়িটা আকাশ ফুঁড়ে উঠেছে। তার মাথায়, থেকে থেকে চিকচিক করছে আলো। অন্ধকারের ভিতরে, চূর্ণ হওয়া উচ্চতার দর্প নিয়ে, চ্যাটার্জি ইন্টারন্যাশানাল ভূতের মত স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে আর সাদা শহীদ মিনারের রঙিন আলোটা জ্বলছে স্থির হয়ে। আসলে গল্পের শুরুটা প্রায় মাস তিনেক আগে। সুজয় আমার বহুদিনের পুরোনো বন্ধু। ওর সাথে দেখা হয়ে গেল চায়ের দোকানে। আমাদের আলাপ এই চায়ের দোকানেই। আমরা তখন ফার্স্ট ইয়ারের ছাত্র। ও সিটি কলেজে কমার্স পড়ত আর আমি পড়তাম বঙ্গবাসী কলেজে ফিজিক্স। তারপর ও বোম্বে গেল হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট পড়তে আর তারপর চাকরি পেল গ্র্যান্ড হোটেলে! চাকরির মাইনের সমানুপ