বড় যদি হতে চাও..

সিবলিং রাইভ্যালরি বা সহোদর ভাইবোনের অন্তর্দ্বন্দ্ব সত্যিই কি কেবল বাল্যবয়সে সীমাবদ্ধ? বড় বয়সের রেষারেষিটা নামকরণের জন্যে কেউ নেই বলেই হয়তো সেটা সাংসারিক দ্বন্দ্ব বলে চালিয়ে দেওয়া হয়ে আসছে। ঋতুপর্ণ ঘোষের অভাবের প্রায় ছ'বছর পর তারই গল্পের ভিত্তিতে ছবি তৈরী হওয়াটা বাংলা সিনেমাপ্রেমীদের জন্যে বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটা ঘটনা। তাছাড়া সেই ছবি যদি কৌশিক গাঙ্গুলীর তৈরী হয় তো তার আলাদা আকর্ষণ থাকেই।

মেনস্ট্রিম নায়ক-নায়িকার ছবি বাদে বাকি সমস্ত ছবি দেখতে বসলেই নিজের অজান্তেই মন যেকোনো একটা চরিত্রের পক্ষ নিয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু এই ছবিতে দর্শকের ব্যক্তিগত খিদে আর অনুভূতি অনুযায়ী যে যার মতো পক্ষ নিয়ে দাঁড়ালেই গোলমাল। পুরুষতান্ত্রিক ভারতীয় সমাজে, সামাজিক পারিবারিক কিম্বা রাজনৈতিক যেকোনো ক্ষেত্রেই বড় ছেলের ভূমিকা সবসময় অগ্রগণ্য। তবে প্রশ্নটা যখন ওঠে অধিকারবোধ নিয়ে, তখন সামাজিকতাকে প্রাধান্য পেতে একটু বেগ পেতে হয়। নিউক্লিয়ার পরিবারে বা ফ্ল্যাট কালচারে বেড়ে ওঠা দর্শকের, এই ছবিকে অবাস্তব আর বেমানান বলে মনে হতে পারে। তবে যেসব দর্শক একান্নবর্তি পরিবারে বেড়ে উঠেছেন, তারা হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করতে পারবেন এই ছবির প্রতিটা স্তর। ছবির পরতে পরতে একটা কথাই প্রতিধ্বনিত হয়, কোনো বড় কিছু কিন্তু একটা পোস্ট বা আসন নয়। মূল গল্পের পাশাপাশি, প্রেম, বিচ্ছেদ, বন্ধন, মুক্তি বা আরও নানান স্বাদের ছোটবড় সমস্ত সাবপ্লট গুলোই মানানসই আর যথেষ্ট যুগোপযোগী।

ঋত্বিক, প্রসেনজিৎ, সুদীপ্তা, গার্গী সহ আর সব অভিনেতাই নিজের নিজের জায়গায় পেশাদারি ছাপ রেখেছে। তবে ঋত্বিকের অভিনয় চোখে পড়ার মতো। ছবির শুরু থেকে শেষ অব্দি ডায়লগের বৈচিত্র্যে, একঘেয়েমি আসার কোনো প্রশ্নই নেই। অযথা কচকচানির কাঁকড় ঝেড়ে ফেলে, ছবির আবহসঙ্গীত বেশ মিষ্টি আর স্নিগ্ধ। তবুও সিনেমার শেষে অভাব বোধ যতটা রইলো, তার অনেকটাই 'সিনেমার মত'। সিনেমা প্রধানত দু'রকমের। একরকমের সিনেমা বারবার দেখলেও পুরোনো হয় না। আর অন্য ধরনটা একবার দেখলেই চলে। জ্যেষ্ঠপুত্র সেই হিসেবে খুব দুর্দান্ত একটা ওয়ান-টাইমার।



Comments

Popular posts from this blog

টাইম ম্যানেজমেন্ট

চিন্তার বিষয়

সব আমি করেচি! আমি!