সবচেয়ে সব্বোনেশে কান্ড হচ্চে গেম পিরিয়ডে বৃষ্টি! হপ্তায় একদিন মাঠ কাঁপিয়ে ফুটবল খেলার স্বপ্ন সব্বার। ডাকসাইটে ভালো প্লেয়ার সব সেকশানেই থাকে। তাদের পা ছাড়িয়ে পায়ে বল পাওয়ার সম্ভাবনাও অলমোস্ট নেগেটিভ; তবে ফুটবল ফুটবল আটমেজটা হলেই বিকেলটা দিব্বি মাখোমাখো আর ফুরফুরে মেজাজ! আধঘন্টাটাক্ নিয়ম-ফিয়ম চুলোয় পাঠিয়ে, ফিফা-চমকানো নিয়ম বানিয়ে কাদা জল মেখে ক্লাসের তিরিশ বত্তিরিশ জন সবাই মেসি!

আমি চিরকালই সেকেন্ড-থার্ড বেঞ্চে বসা ছাত্র। পড়াশোনা করতেই ভাল্লাগত; তবে প্রেয়ার হলের মাথার কালো মেঘ কেন জানি না, ডজ করে ব্ল্যাকবোর্ডের পা থেকে মন চুরি করে ফেলত অনায়াসেই! তারপর মুখপোড়া কাক বিশ্রী চেঁচিয়ে তাল কাটতেই নজর যেত, ব্ল্যাকবোর্ড অন্য রূপ ধারণ করেছে! স্যারকে জিজ্ঞেস করলেই আবার খিল্লি টোন টিটকিরি.. তারপর আবার কোচিঙের মেয়েদের সামনেই চাটন খাওয়ার চান্স! সদ্য টেস্টোস্টেরোন ফুটে রেসের ঘোড়া তখন! রিস্ক কে নেয়! ধুস্!

বয়েজ ইস্কুলের ছেলেদের নারীসঙ্গ শুধু নেই নয়, ভবিষ্যতে হওয়ার চান্সও নেই। তবুও কোচিং পড়ার সুবাদে টুকটাক ওড়নার ওড়াউড়ি, বিনুনির দুলুনি আর লেডিবার্ড সাইকেলের ক্রিং ক্রিং! বিকেল হলেই শান্ত অলিগলিতে তেলেভাজার গন্ধ আর দামাল ইনফ্যাচুয়েশানের ফুলঝুড়ি! গেম পিরিয়ড শেষে ঘামে জবজবে গেঞ্জি থেকে ঝাঁঝালো গন্ধে পৌরুষের অ্যারোমা। 'ক্রাশ' শব্দের সাথে পরিচয় হওয়ার আগেই বুক ধুকপুকুনির মুখোমুখি! কী আনন্দ! পৃথিবীতে এত সুখ! সুখের চোটে বরানগর যেন বেলজিয়াম!

নব্বইয়ের দশকের সেইসব কৈশোরের তারাগুলো এখন আরো উজ্জ্বল। কেউ বিদেশে, কেউ অন্য শহরে, কেউ কলকাতাতেই। কেউ পড়ে, কেউ পড়ায়, কেউ চাকরি আবার কেউ বেকার! নানান রকমের ধাক্কা, নানান বয়সী অভিজ্ঞতায় চোঁ চোঁ করে বয়স হচ্ছে। জুলাই অগস্টের বিকেলে নিয়মমাফিক বৃষ্টির পর হঠাৎ আকাশ পরিষ্কার হলেই  দিল খুস! লাস্ট পিরয়ডের আগে রোদের ঝলকের মত অপার্থিব সুখ খুব কম হয়! ফ্যাকাশে হলদে আলোয় রাস্তাঘাট আড়মোড়া ভেঙে গুটিসুটি মেরে লেডিবার্ড সাইকেলের ক্রিং ক্রিং শোনে আর বিড়বিড় করে বলে ".. তোমাকে আমার তোমার বয়সী সবকিছু দিতে বড় সাধ হয়!"



Comments

Popular posts from this blog

চিন্তার বিষয়

My letter to The Chief Minister of West Bengal

উত্তম মাধ্যম